শৈলকুপার শসা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আড়ৎদার ও দালালদের খপ্পরে দাম পাচ্ছে না চাষীরা
শৈলকুপার শসা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আড়ৎদার ও দালালদের খপ্পরে দাম পাচ্ছে না চাষীরা
গ্রীষ্মকালীন সবজিগুলোর মধ্যে শসা একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। তবে এখন প্রায় বারো মাসই শসার চাষ হয়ে থাকে। অল্প খরচে ভালো লাভ হওয়ায় শৈলকুপাতে কৃষকরা ঝুঁকছেন শসা চাষে। এক বিঘা জমিতে শসা চাষ করতে খরচ হয় প্রায় ২০ হাজার টাকা। আর বিক্রি করা যায় লাখ টাকার শসা। শৈলকুপার শসা যায় দেশের নানা প্রান্তে।
রমজানে চাহিদা স্বত্ত্বেও আড়ৎদার ও দালালদের খপ্পরে পড়েছে এখানকার শসা চাষীরা। খেত থেকে ওঠানোর পরে শসা খুব কম দামে বিক্রি হওয়ায় হাসি নেই কৃষকের মুখে। বাজারের দখল নিয়েছে ফড়িয়া, ব্যবসায়ী আর মধ্য স্বত্ত্বভোগীরা।
শৈলকুপায় প্রায় ৩০টি গ্রামে শসার চাষ হচ্ছে, অনেকে আবার ক্ষীরার চাষও করেন। চৈত্র মাসে বীজ বপণের পর এক মাসের মাথায় শসা ধরতে শুরু করে। বিক্রি করা যায় চার মাস ধরে। দেশীয় ও ভারতীয় ভ্যারাইটস নামে দু জাতের শসার চাষ হয় এখানে।
এখন রমজান মাস, শসার ব্যাপক চাহিদা হাট-বাজারে, তাই শৈলকুপার সহ¯্রাধীক কৃষক পরিবার এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে শসার ক্ষেতে। সপ্তাহে ৩দিন ট্রাকের পর ট্রাক ভর্তি শসা যাচ্ছে ঢাকার কাওরান বাজার, যাত্রবাড়ি, গাজিপুর, সাভার, চট্টগ্রাম,সিলেট সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। শৈলকুপার শসা বিক্রির বড় বাজার মদনডাঙ্গা, শেখপাড়া ও চড়ই বিল।
উপজেলার ত্রিবেনী, মির্জাপুর, দিগনগর, কাঁচেরকোল ও দুধষর ইউনিয়নের কৃষকেরা বছরের পর বছর নিয়মিত শসা চাষ করে আসছে। তবে মাঠ থেকে তোলা তরতাজা শসা কৃষকরা বিক্রি করছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। আর সেই শসা ফড়িয়া, দালাল আর পাইকারি হাত ঘুরে বিভিন্ন খুচরা বাজারে ৬০/৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আড়ৎদার ও দালালদের খপ্পরে পড়েছে শসা চাষী ও বিক্রেতারা ।
শৈলকুপা থেকে মাত্র ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইদহ শহরের কাঁচা বাজারে প্রতি কেজি এই শসা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মদনডাঙ্গার আড়তে ২৫ টাকা কেজির ক্ষীরা জেলা শহরে ৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিদিন সকালেই মদনডাঙ্গাসহ পাশের বাজারগুলো থেকে শসা ও ক্ষীরা চলে আসে ঝিনাইদহ শহরে। জেলা শহরে এগুলো আনতে খরচ হয় কেজিতে ৩ টাকা। অথচ খুচরা বাজারে কেজিতে প্রায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। তাঁদের দাবি, বাজারে এখনো শসা-ক্ষীরা তেমনটা আসছে না। তাই বিক্রির কোনো সঠিক মূল্য নেই। একেক দিন একেক দামে বিক্রি হচ্ছে।
মদনডাঙ্গা বাজারে শসা বিক্রি করতে আসা রানীনগর গ্রামের কৃষক আমিরুল ইসলাম জানান, ১৮ শতক জমিতে শসার চাষ করেছিলেন। এখন রমজান মাস চলছে। তারপরও ৩৫ টাকায় শসা বিক্রি করতে হয়েছে। এই দামে শসা বেঁচলে চাষের খরচই উঠে না। তাঁর অভিযোগ, এই শসা বাজারে খুচরা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা উৎপাদন করে কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
মদনডাঙ্গা বাজার থেকে শসা আর ক্ষীরা কিনে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান। ৩৫ টাকার শসা ৬০ টাকায় বিক্রির ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা এখান থেকে অল্প পণ্য কিনে ঝিনাইদহসহ পাশের বাজারগুলোতে নিয়ে যান। তাঁরা একটু বেশি লাভে বিক্রি করেন। তারপর খুচরা ব্যবসায়ীরা আরেক দফা লাভে সেগুলো বিক্রি করছেন। ফলে ৩৫ থেকে ৪০ টাকার শসার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা উঠছে।
দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে আড়তদারেরা খুচরা ব্যবসায়ীদের, আবার ব্যবসায়ীরা আড়তদারদের ওপর দোষ চাপান।
ঝিনাইদহ শহরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেস হোসেন বলেন, কিছু ছোট পণ্য বিক্রি হতে চায় না। যে কারণে তাঁদের একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। তবে তাঁরা কেজিতে ৫ টাকার বেশি লাখ করেন না। খুঁচরা ব্যবসায়ী সোহেল রানা জানান, আড়ত থেকেই পাইকারি বেশি মূল্যে শসা কিনতে হচ্ছে। যে কারণে খুচরাও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ঝিনাইদহের সহকারী পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, কাঁচা বাজারে তাঁরা কোনো ক্রয়-বিক্রয় রসিদ রাখেন না। যে কারণে বেশি মূল্যটা কে নিচ্ছে, সেটা নিশ্চিত করাটা মুশকিল। এ জন্য তাঁরা ক্রয়-বিক্রয় রসিদ রাখার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইতিমধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছেন। এ বিষয়ে আরও বেশি তৎপরতা চালাবেন বলে আশ্বাস দেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঝিনাইদহে প্রতিবছর ১০০ হেক্টরে শসা ও ক্ষীরার চাষ হয়, যার বেশীর ভাগই শৈলকুপাতে। এ বছর ৪৫ হেক্টর জমিতে শসা, আর ৫০ হেক্টরে ক্ষীরার চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে শসা আর ক্ষীরা উৎপাদন হয় ১৮ মেট্রিক টন। সেই হিসাবে জেলায় ১ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন শসা ও ক্ষীরা উৎপাদিত হচ্ছে, যা পাইকারদের মাধ্যমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়।