শৈলকুপায় ৩ মাসেও নতুন বইয়ের গন্ধ পেল না শিশুরা ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকরা

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ৩ মাসেও নতুন বইয়ের গন্ধ পেল না শিশুরা। এতে ক্ষোভ দেখা গেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে। এখনো ৪০% শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছায়নি নতুন বই। কেন এখনো শিশুদের হাতে হাতে নতুন বই পৌছায়নি তা বলতে পারেনি শিক্ষকরা। আর শিক্ষা অফিসার বলছেন দ্রুতই পৌছে যাবে নতুন বই ।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বড় সাফল্যগুলোর মধ্যে ইংরেজি বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া একটা মাইলফলক। এবারও বছরের প্রথম দিনেই বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেয় সরকার।

তবে চলতি বছরের তিন মাস হতে চললেও শৈলকুপা উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণীতে মারাত্মক আকারে সংকট দেখা গেছে নতুন বইয়ের। কোন কোন শিক্ষার্থীর হাতে জোটেনি ১টিও নতুন বই। আবার কেউ কেউ ২ থেকে ৩টা নতুন বই পেলেও বাকি বই তুলে দেয়া হয়েছে গত বছরের অর্থাৎ পুরাতন।

দীর্ঘদিন পর গত ২ মার্চ ক্লাস শুরু হয়েছে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের। কিন্তু নতুন বই থেকে বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে দ্রুত বই দেওয়ার দাবি অভিভাবকদের।

শিক্ষকরা জানিয়েছেন, চাহিদা অনুযায়ী না পেলেও পুরানো বই দিয়ে আপাতত ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন পাঠ্যসূচীতে কোন পরিবর্তন না থাকায় পুরাতন বই দিয়ে ক্লাস চালিয়ে নিতে পারছে শিক্ষার্থীরা।

 

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কবিরপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোহেলী খাতুন জানান, প্রাথমিকের সব বই এখনো পাওয়া যায়নি । কেবলমাত্র শিশু শ্রেণী ও ১ম শ্রেণীর নতুন বই শিশুদের হাতে তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর ৬৮ সেট নতুন বই দরকার হলেও এসেছে কিছু কম, তৃতীয় শ্রেণীর ৭১ সেট বইয়ের মধ্যে এসেছে ৫৬ সেট, চতুর্থ শ্রেণীর ৮৫ সেট বইয়ের মাঝে ৬৬ সেট বই এসেছে,পঞ্চম শ্রেণীর ৮৫ সেটের মাঝে ৬৬ সেট নতুন বই পাওয়া গেছে বলে জানান। আর পঞ্চম শ্রেণীর ইংরেজী বই একেবারেই আসেনি। বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষক অসীম সাহা বলেন, পাশের জেলা কুষ্টিয়াতে অতিরিক্ত নতুন বই আছে, সেখান থেকে আনার চেষ্টা চলছে।
কবিরপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র রুবাইয়া জানান, তার ৪টি বই পুরাতন। একই ক্লাসের জান্নাতী খাতুন কান্না জড়িত গলায় জানায় তার ৬টি বই ই পুরাতন। শিক্ষার্থী রিফাত জানায় তার ৪টা নতুন বই আর দুটি পুরাতন। চতুর্থ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাকিব জানায়, তার ২টি নতুন বই জুটেছে আর একই ক্লাসের শিক্ষার্থী শিমুল জানায় তার ৬টি বই ই পুরাতন।

শৈলকুপার শাহী মসজিদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী প্রাপ্তি ও জুথী খাতুন জানায়, ৫টি নতুন বই দিয়েছে শিক্ষকরা। আর একই শ্রেণীর ছাত্র তামিম জানায় তার ৫টি বই ই পুরাতন। শিক্ষার্থী অর্ণব জানায় তার মাত্র ১টি বই নতুন। শাহী মসজিদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, তাদের বিদ্যালয়ে দেড়শত শিক্ষার্থী রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণীতে ৩টা করে নতুন বই, চতুর্থ শ্রেণীতে ২টা করে নতুন বই আর পঞ্চম শ্রেণীতে ৫টি করে নতুন বই তুলে দেয়া হয়েছে।
শৈলকুপা উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্যমতে, শৈলকুপায় ১৮১টির বেশী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর শিক্ষার্থী ৫২ হাজারের বেশী।
শৈলকুপা উপজেলা শিক্ষা অফিসার ইসরাইল হোসেন জানান, নতুন বইয়ের তেমন সংকট নেই। তৃতীয় থেকে ৫ম শ্রেণীর ইংরেজি, সমাজ ও বিজ্ঞান বইয়ের কিছু স্বল্পতা আছে যা আজ-কালের মাঝে চলে আসবে। সকল শিক্ষার্থী দ্রুত নতুন বই পেয়ে যাবে।
শুধু শৈলকুপা নয় বছরের ৩মাস পেরিয়ে গেলেও জেলা জুড়েই নতুন বইয়ের সংকট রয়েছে বলে জানা গেছে। অর্থাৎ ৬টি উপজেলার শিশু শিক্ষার্থীরা এখনো সবগুলো নতুন বই থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
সঠিক সময়ে বই দিতে না পারার দায় প্রেসের ওপর চাপালেন ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম। তবে তিনি জানান দু-এক দিনের ভেতরে নতুন বই চলে আসবে। তিনি বলেন মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি থেকে নতুন বই আসার পথে রয়েছে, সংকট কেটে যাবে।

এই বিভাগের আরও খবর
Loading...