শৈলকুপা সেটেলমেন্ট অফিস কি দুর্ণীতির আখড়া; কিভাবে বে-দখল আর ব্যাক্তি নামে রেকর্ড হলো শত বছরের আখড়া বাড়ির সম্পদ-সম্পত্তি

 

ভূমি জরিপের নোটিশ প্রদান, মৌজার নকশা ও কাঠামো স্থাপন,জমির মালিকানা ও দখল সংক্রান্ত প্রমাণাদি উপস্থাপন, খতিয়ান বা পর্চা জমির মালিককে সরবরাহ সহ ভ’মি সংক্রান্ত নানা কাজ করে থাকে সেটেলমেন্ট অফিস। তবে ভ’ক্তভোগীদের অভিযোগ দিন কে দিন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলা সেটেলমেন্ট অফিস। ভ’মি সংক্রান্ত কাজে এসে উল্টো হয়রাণীর শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অফিসটির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘুষ-দূর্ণীতির কারণে একজনের জমি হয়ে যাচ্ছে অন্যের নামে, দখল আর রেকর্ড কখন কার নামে যাচ্ছে তা যেন বুঝে উঠার উপায় নেয় । জমির দলিল থাকলেও মূল মালিক পাচ্ছেন না তার জমি আবার যার নামে নেই কোন দলিল-দখল সে হয়ে যাচ্ছে জমির মালিক। জাল-জালিয়াতি সহ এ যেন হরিলুটের কারখানা।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে শৈলকুপা উপজেলার ১নং ত্রিবেনী ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর গ্রামের এসএ ২৯৬ নং খতিয়ানের ১২৩৭ দাগের ৯২শতক জমির উপর রয়েছে সাধু- সন্ন্যাসীদের শত বছরের পুরাতন একটি আখড়া বাড়ি। আর তাদের মোট জমির পরিমাণ ৯২শতকের উপরে। এখানে সাধু-সন্ন্যাসী কবর, মাজার সহ পাকা স্থাপনা রয়েছে।
প্রতিবছর এই আখড়াবাড়িতে শত শত সাধু, সন্ন্যাসী, ভক্তনুরাগীরা জড়ো হয়। স্মরণোৎসব, সাধু সঙ্গ, বাউল সঙ্গীত সহ হয় নানা অনুষ্ঠান । একতারা, দোতারা, প্রেমজুড়ি, খমগ, ডুগডুগি, মন্দিরা সহ নানা বাদ্যযন্ত্রের সুরে ডুবে যান সাধু-বাউলেরা। তবে দিন যতই যাচ্ছে ততই এসব অনুষ্ঠান এখন আর দেখা যায় না শত বছরের পুরাতন এই আখড়াবাড়িতে। কারণ আখড়া বাড়ির সম্পদ-সম্পত্তি সবই আস্তে আস্তে দখল করে নিয়েছে এলাকার ভ’মিদস্যু- দুর্বৃত্তচক্র । শুধু দখলই নয় এমন কি নিজ নামে রেকর্ডও করে নিয়েছে আখড়া বাড়ির সম্পত্তি। এ যেন হরিলুট, কেউ ১শতক, কেউ ৫শতক, কেউ আধা শতক, কেউ ১০ শতক অর্থাৎ যে যেমন পারে সে তেমন করে রেকর্ড করে নিয়েছে এই সেটেলমেন্ট অফিসের মাধ্যমে । আখড়া বাড়ির মোট ৯২শতক জমিই এখন বেহাত।
আখড়াবাড়ির এসব সম্পত্তি বহুবছর আগে তুরালী বিশ্বাস,

‌ বিবিজান, হরিচরণ,আনন্দ,মেনাজদ্দিন, আরব্দি,মধু,রেয়াজদ্দিন গং, ঠান্ডা বেওয়া, বাছের গং,জহর ন্নেছা,ভাগার,মতী,দানেছ, জহুর ন্নেছা সহ দানশীল মানুষ দান করে দেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে । জমির কাগজপত্র ঘেটেও তাদের নাম পাওয়া যায় । ন্যাংটা সাধক আরমান শাহর স্মরণে এসব জমি দান করে আখড়াবাড়ির নামে, এখানেই রয়েছে তার মাজার।

 

জানা গেছে, এই সম্পত্তি আখড়াবাড়ি বা সংঘের নামে( জায়সুদি দং সাধুচরণ পূন্ডরী) থাকলেও তা এখন পাবলিকের বা ব্যাক্তি নামে নামে রেকর্ড হয়েছে। শৈলকুপা সেটেলমেন্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে রেকর্ডের পর চলমান ৩০ধারা, ৩১ ধারাও অতি গোপনে সম্পন্ন হয়েছে। তবে আখড়ার মাত্র ৫শতক জমি যেখানে মাজার রয়েছে সেটি নিয়ে সেটেলমেন্ট অফিসে শুনানী চলছে। আব্দুল মজিদ নামের এক ব্যাক্তি এ সম্পত্তি কথিত দলিলমূলে রেকর্ড করে জমির দাবিদার সেজেছে। তবে আখড়া বাড়ির সাধু-সন্ন্যাসীদের বাধার মুখে অবশেষে নড়ে চড়ে বসেছে সেটেলমেন্ট অফিস। ২২মার্চ-২০২২ ইং তারিখে শুনানী শেষে ফের তদন্ত দেয়া হয়েছে সার্ভেয়ারের উপর, এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছে আখড়াবাড়ির বর্তমান দেখভালকারী কমিটি। ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করেছে জমি পূনরুদ্ধারের চেষ্টাকারীরা। এদের একজন আসাদুজ্জামান, তিনি বলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে এই সম্পত্তি উদ্ধারে দৌড়ঝাপ করছেন।
শৈলকুপা সেটেলমেন্ট অফিসের কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, কাগজপত্র অনুসারে এসব সম্পত্তি দেখা হবে, কেউ ন্যায়বিচার বঞ্চিত হবে না।

এই বিভাগের আরও খবর
Loading...