অবশেষে বিদায় নিলেন শৈলকুপার বিতর্কিত ওসি(তদন্ত) মহসীন খুলনায় তার একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণ, অর্থের উৎস কি ?

অবশেষে শৈলকুপা থেকে বিদায় নিলেন বিতর্কিত ওসি(তদন্ত) মহসীন হোসেন । সাধারণ মানুষ কে হয়রানী, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া সহ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডে চরমভাবে ক্ষুন্ন হতে থাকে থানা পুলিশের ভাবমূর্তি।
থানা পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারী মাসের ১১ তারিখে পুলিশের এই কর্মকর্তাকে বদলী করা হয় বাগেরহাট জেলাতে, সেখানে ডিএসবিতে সংযুক্ত করা হয়। তবে অবশেষে শৈলকুপা থানা থেকে মার্চ মাসের ১১তারিখে বিদায় নেন এই কর্মকর্তা।
বদলী আদেশের পরেও থানায় তার অবস্থানকালে ঘটে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নের আরোও একটি ঘটনা। ৮মার্চ শৈলকুপা থানার ওসি তদন্ত মহসীন হোসেন রিমান্ডের আসামীদের থানায় হ্যান্ডকাফ ছাড়ায় বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেন, তাদের হাতে কোন হ্যান্ডকাফও ছিল না। স্যোশাল মিডিয়াতে এর লাইভ সম্প্রচারের পর তীব্র বিতর্কের মুখে থানা পুলিশ। দেশের শীর্ষ জাতীয় দৈনিক ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলিতে খবরটি প্রচার ও প্রকাশিত হয়। এ ঘটনার সমালোচনা, প্রতিক্রিয়া ও অনুসন্ধানের মাঝে তিনি চলে গেলেন বদলীকৃত নতুন কর্মস্থলে ।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন কর্মকর্তা হয়ে জনগনের সেবক হওয়ার বদলে জনগন কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করায় যেন তার স্বভাব হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রান্তিক আর অসহায় মানুষের কাছে এক মূর্তমান আতঙ্কের নাম হয়ে ওঠে মহসীন হোসেন।
অপরাধ প্রবণ ঝিনাইদহের শৈলকুপায় একের পর এক খুন হয়, মাত্র ১মাসেরও কম সময়ে ৬জন খুন হয়। বাড়ি-ঘর ভাংচুর, লুটপাট আর ডাকাতি নৈরাজ্য এই জনপদের মানুষের যেন ভাগ্যের লিখন হয়ে ওঠে। পেশাদার খুণীদের আনাগোনা, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের দৌরাত্ব, তালিকাভ’ক্ত সন্ত্রাসীদের প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানো, হত্যা মামলার আসামীদের মহড়া আর চরমপন্থীদের এক সময়কার অভয়ারণ্য হিসাবে খ্যাত অস্ত্রধারীরা গ্যাংগ্রুপ নিয়ে শৈলকুপা জুড়ে রক্তের হলি খেলায় মেতে উঠে ! এমন পরিস্থিতিতে মাত্র ২মাসের মাথায় থানা থেকে বদলী হন ওসি রফিকুল ইসলাম। থানার বিতর্কিত কর্মকর্তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল ওসি (তদন্ত) মো: মহসীন হোসেন। ২বছর ২মাসের বেশী সময় তিনি শৈলকুপা থানাতে থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোন উন্নতি ছিল না।
তুচ্ছ ঘটনায় থানায় ডেকে হুমকি-ধামকি, অর্থ হাতিয়ে নেয়া, মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার বানিজ্য, সাদা কাগজে স্বাক্ষর করিয়ে হুমকির মুখে রাখা যেন তার স্বভাব হয়ে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ উঠতে থাকে । তার হাত থেকে রক্ষা পায়নি সাংবাদিক সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার দায়িত্বশীল মানুষও। ফাঁসিয়ে দেয়া হয় মিথ্যা মামলার জালে। এসব নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় শৈলকুপা জুড়ে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, খুলনার অভিজাত এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন ঝিনাইদহের শৈলকুপার এই ওসি তদন্ত মহসীন হোসেন। বিভাগীয় শহর খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেরের মোড়ে ফারুকিয়া জামে মসজিদ ক্রসরোডে ওসি তদন্ত মহসীন তার শ^শুরালয়ে নির্মাণ করছেন এই ভবন। তবে রহস্যজনক কারণে ভবনে এখনো হোল্ডিং নাম্বার যুক্ত করা হয়নি। এরই মধ্যে ভবনটির দ্বিতলা সম্পন্ন করা হয়েছে।
রোডের গলিতে ঢুকতেই বায়ে তার প্লট। সেখানেই সুরম্য অট্টালিকা নির্মিত হচ্ছে শৈলকুপার ওসি তদন্ত মহসীন হোসেনের।
একাধিক সূত্রমতে, শুধু সোনাডাঙ্গা নয় খুলনার আরেক অভিজাত এলাকা ময়লাপোতাতেও রয়েছে এই পুলিশ কর্মকর্তার সুরম্য অট্টালিকা, এসব ভবন আর অর্থের উৎস কি এমন প্রশ্ন সাধারণ জনগনের। শৈলকুপা থাকাকালে বেশ কয়েকটি ব্যাংক একাউন্ট পরিচালনা করতেন তিনি, প্রায়শ^ই পাঠাতেন মোটা অংকের টাকা ।
পুলিশের এই কর্মকর্তার নানা কাহিনী নিয়ে ঢাকার একটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশের পরপরই ফেব্রুয়ারী মাসের ১১ তারিখে তাকে ঝিনাইদহের শৈলকুপা থানা থেকে বদলী করা হয় বাগেরহাটে। অবশেষে মার্চ মাসের ১১ তারিখে বিদায় নেন।
এদিকে নানা ঘটনা প্রসঙ্গে বিভিন্ন সময়ে ওসি তদন্ত মহসীন হোসেনের সাথে আলাপকালে তিনি তার বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছেন। কখনো বলছেন পরিস্থিতির কারণে কিছু ঘটনা ঘটেছে।
এই বিভাগের আরও খবর
Loading...